তৃতীয় পর্ব :- খান সাহেব ( খোরশেদ খান) ঘুম থেকে নাকে প্রচুর ব্যাথা নিয়ে উঠলেন .নাকে প্রচুর ব্যাথা নিয়েও তিনি মুচকি-মুচকি হাসছেন. কারণ তিনি সকালের কাজটি খুবই সহজভাবে সফল করতে পেরেছেন .তিনি তার স্ত্রীকে সহজভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে -"তার নাকটি হোচট খেয়ে পরে এরকম হয়েছে".তার স্ত্রীও এই ঘটনাটি সহজভাবেই মেনে নিয়েছেন.যদিও তিনি সহজ কোনো মহিলা নন .তিনি তিল কে তাল করার মত মহিলা. কিন্তু আজকে তিনি তাল করার মত কোনো ঘটনা ঘটান নি -এই জন্য খান সাহেব মোটামুটিভাবে আশ্চর্য হয়েও সুস্থির নিঃশ্বাস ফেলছেন . তাছাড়া খান সাহেবের দীর্ঘদিনের অভ্যাস .তিনি ঘুম থেকে উঠে কখনই সত্য কথা বলেন না. সত্য বললে তার দিনটা শুভো হয় না. একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে .গতকাল রাতের ঘটনাও ছিল ঐরকম একটি ঘটনা . খান সাহেব সময় সময় ভাবেন -তিনি বোধ হয় শয়তানের খুব কাছা-কাছি চলে এসেছেন . কারণ তার মাথায় কখনো ভালো চিন্তা- ভাবনা আসে না. তার মাথার সব চিন্তাই শয়তান জাতীয় চিন্তা . আচ্ছা তিনি কি পারেন না ভালো কিছু ভাবতে ?তার চার-পাশ থেকে প্রতিবাদের ঝর উঠে. তারা বলে উঠে -"না ..না সম্ভব নয় .এটা হলে তোমার ডিজিটাল দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে .তুমি যে নেতা ;তোমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে .” খান সাহেব চোখে পানি ছিটালেন. এতক্ষণ তিনি বাত-রুমের বেসিনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন .এবার তিনি তার চোখটা তুললেন .বেসিনের সামনের আয়নায় তিনি তার চেহারা দেখে আতঙ্কিত হলেন .তিনি বুঝতে পারলেন -অর্থ এবং ক্ষমতার কাছে বিবেক মূল্যহীন .তিনি মৃদু হাসলেন .যে হাসি কোনো সুস্থ মানুষের হাসি নয় .অসুস্থ মানুষের হাসি .এক সময় তিনি লক্ষ্য করলেন তার কপাল ঘামছে ,শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে . হঠাত তার কানে ভেসে আসলো গুন-গুনানির শব্দ .তার নাতনি, পুতুল গুন-গুনিয়ে পড়ছে . আর এতক্ষণে তিনি বুঝতে পারলেন -সকালের আরেকটি কাজ বাকি রয়ে গেছে .তিনি তার নাতনি পুতুলের সাথে এখনো দেখা করেন নি . খান সাহেব এবার হাটতে লাগলেন পুতুলের ঘরের দিকে .পুতুল তাকে দেখতে পেয়েই বলে উঠলো-- --আসলামু আলাইকুম .দাদু ভাই.... খান সাহেব কিছুই বললেন না .শুধুই হাসলেন . পুতুল আবার বলে উঠলো-- ---দাদু .প্রত্যেক দিন আমি তোমাকে গুড মর্নিং বললে তুমিও গুড মর্নিং বল .আজকে তোমাকে সালাম দিলাম তুমি কিছু বললে না, কেন?তুমি কি জানো? সালাম দেওয়ার জন্য আমি নব্বইটি সওয়াব পাব .আর তুমি .. ---জানি দাদু ভাই...ওয়ালাইকুম মুস্সালাম... ---আচ্ছা দাদু ভাই তোমার নাকে কি হয়েছে ? ---নাকে ?নাকে ইয়া বড় একটা মশা কামর মেরেছে .যার জন্য এত ফুলে গেছে. ---হি-হি-হি....দাদু ভাই তুমি এখনো আমাকে খুবই ছোট মনে কর ; ---হা . ---আমি কিন্তু ছোট না . ক্লাস ফরে পড়ি. ---জানি তো . ---আমি সব জানি . ---কি জানো ? ---তুমি প্রচুর মিথ্যে কথা বল . খান সাহেব কিছুটা হচচকিয়ে গেলেন .তিনি সবার সাথে মিথ্যে বললেও এই নাতনির সাথে বলতে পারেন না .ধরা পরে যান .তার ধারণা -তার নাতনির বোধ হয় বিশেষ কোনো ঐশ্বরিক পাওয়ার আছে .মিথ্যে বললেই ধরে ফেলতে পারে . খান সাহেব জোর গলায় বলে উঠলো-- ---মিথ্যে ? আমি? তোমাকে কে বলল ? ---আমি জানি . আমার বন্ধুরাও বলে . --- তোমরা আমাকে নিয়ে আলোচনা কর. ---হু . ---তুমি কি জানো? বড়দের সমন্ধে যে কোনো প্রকারের কথা বলা ব্যাদবী . ---হু . ---আর কখনো এসব নিয়ে আলোচনা করবে না .ঠিক আছে? ---জ্বি, ---আর শোনো ,তোমার মাস্টারকে আমার সাথে দেখা করতে বলবে. ---আচ্ছা ; খান সাহেব বসা থেকে উঠে পড়লেন .এবং ফিস-ফিস করে বলতে লাগলেন -"শালার মাস্টার .তোমাকে পেয়েছি তো আজ খেয়েছি .শালা পড়া-লেখা না শিখিয়ে পরচর্চা শেখাও;".খান সাহেব রুম বেরিয়ে যাচ্ছিলেন .ঠিক এসময় তার কানে আবার ভেসে আসলো -"মুনাফিকের চিন্হ তিনটি . যারা কথা বলে ,মিথ্যে বলে ……" খান সাহেব আবার তার নাতনির দিকে ফিরে তাকালেন. এবং বললেন --- ---দাদু ....ভাই? ---বই পড়ছি দাদু. ইসলাম শিক্ষা. খান সাহেব কিছু বলতে চেয়েও বললেন না .তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন .ঠিক তখনই পুতুল আবার বলে উঠলো--- ---দাদু..? ---হু.. ---একটা কথা বলব? ---বল. ---আচ্ছা তুমি সত্য বলার চেষ্ট্রা কর না কেন? খান সাহেব কিছুই বলছেন না. এতটুকো বাচ্চা মেয়ে তাকে উপদেশ দিচ্ছে. বিষয়টি মেনে নেওয়ার মত নয়. সাধারণ পাবলিক হলে আলাদা কথা. কিন্তু সাবেক সংসদ সদস্যকে বাচ্চা মেয়ের উপদেশ শুনতে হবে -যা খুবই অপমানজনক.খান সাহেব ভিতরে ভিতরে খুবই উত্তেজনা অনুভব করছেন .ভাবছেন মেয়েটিকে খুব জোরে ধমক দিবেন .হোক না সে তার আদরের নাতনি. কিন্তু পারলেন না .তার নাতনির চেহারার দিকে তাকিয়েই তিনি থেমে গেলেন . অসম্ভব মায়াবী এক চেহারা .এরকম চেহারার দিকে তাকিয়ে কখনো চোখ রাঙানো যায় না. শুধুই ভালবাসা যায়. খান সাহেবও সেই ভালবাসায় মাখা-মাখি হয়ে গেলেন .সীমাহীন এক ভালবাসায় .এর পরপরই আবার ভাবলেন -"এরকম দুষ্য মেয়েকে এত ভালবাসার কোনো মানে হয়?" মিসেস খানের গলা শোনা গেল .তিনি কর্কশ গলায় খান সাহেবকে ডাকছেন. খান সাহেব এর কোনো জবাব দিলেন না .তিনি দ্রুত বেগে হাটতে লাগলেন .এবং স্ত্রীর সামনে গিয়েই একটু রাগ মেশানো গলায় বললেন ---- ----তোমাকে কতবার বলেছি .সকাল সকাল তুমি কখনো উচু গলায় ডাকবে না. সকালে তোমার গলার স্বর কর্কশ লাগে . কিন্তু বিকেলে লাগে না .বিকেলে সু-মধুর লাগে . মিসেস খান রাগে সাপের মত ফস-ফস করে উঠলেন . এবং দাতে দাত কামড়ে বলে উঠলেন -- --- ---ওরে আমার কোকিল কন্ঠের বুড়ো রে .. বলেই তিনি হাতের মোবাইলটি ছুড়ে মারলেন .খাটিয়া লক্ষ্য করে .খান সাহেব মুচকি হাসলেন .হাসার মতই ব্যাপার .কারণ তার স্ত্রী প্রায়ই রেগে যান . রেগে গিয়ে কাঁচের গ্লাস ,প্লেট ছুড়ে মারেন .আর এগুলো ছুড়েন নরম খাটিয়ার উপর .যাতে এগুলো না ভাঙ্গে .তিনি আজকের মোবাইলটাও একইভাবে ছুড়ে মারলেন . খান সাহেব স্ত্রীর ব্যবহারে খুশি হয়ে গেলেন .চরম রাগের মহুর্তেও বুদ্বিমানের পরিচয় দেওয়ার জন্য. খাটিয়ার উপর পড়ে থাকা মোবাইলটি আবার বেজে উঠলো. খান সাহেব মোবাইলটি তুলে নিলেন .এবং তিনি খুবই বিরুক্তিভরে বলে উঠলেন-- ---হ্যালো..? ওপর পাশ থেকে একজন খুশি খুশি গলায় বলে উঠলো--- ---হ্যালো ..এম পি সাহেব স্যার. ---এম পি সাহেব আবার স্যার কি? যেকোনো একটা বলো .হয় স্যার .না হয় এম .পি সাহেব . ---সরি স্যার . ---ঠিক আছে .এবার বলো এত সকাল সকাল ফোন করার কারণ কি? ---সরি স্যার .গতকাল সন্ধ্যার দিকে অনেকবার আপনাকে ফোন দিয়েছি ,রাতেও দিয়েছি .কিন্তু পাই নি .আপনার ফোন বন্ধ ছিল .আপনার বাড়িতে খোজ করেছি তাও নেই . ------কাজেই সকাল সকাল আপনাকে ডিস্টার্ব.... ---আচ্ছা, ঠিক আছে .এবার বলো কি হয়েছে ? ---স্যার একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে ...হি- হা-হা -হা... ---দুর্ঘটনা ? তো হা-হা- করে হাসছো কেন? বিরোধী দলের কাউকে মার্ডার করছো নাকি ? এভাবে হাসছো...?(.চলবে )
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।